মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা ঃ পবিত্র
ঈদুল আযহা আসন্ন। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে কুষ্টিয়ার
কুমারখালী উপজেলার কোরবানীর পশু পালনকারী খামারিদের
দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারনে পশু বাজারে
নিতে পারবেন কি না, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কি না,
ক্রেতা মিললেও দাম পাওয়া যাবে কি না এমন নানাবিধ উদ্বেগ
নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উপজেলার খামারিরা।
বিভিন্ন খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির
পশু বাজারে তোলার সময় ঘনিয়ে আসলেও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন
তারা। হাট-বাজারে পশু তেমন উঠছেনা, উঠলেও বেচাকেনা
তেমন নেই। বিগত বছরের মত ঢাকা চট্টগ্রাম কিংবা
সিলেটের ব্যাপারিরা এবার আগমন করেনি। ফলে কৃষক কিংবা
খামারীদের থেকে ঘুরে ঘুরে কেউ পশু কিনছেন না।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই কুমারখালীর খামারিরা সারা
বছর কোরবানীর পশু হিসেবে গরু মহিষ ছাগল লালন পালন করে।
তারা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়, কিন্ত
এবার সে আশায় যেন গুড়েবালি! ঈদে পশু বিক্রি করতে না পারলে
বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে তাদের। এছাড়াও লেখাপড়া শেষ করে
অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে
ডেইরি ফার্ম বা গরু ছাগল মোটা তাজাকরণ পেশা। এই
কারনেই কুমারখালী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে
ছোট বড় খামার। সেখানে সারা বছর কশাইদের কাছে পশু বিক্রি
করা হলেও স্পেশাল পশু তৈরি করা হয় কোরবানি ঈদে অধিক লাভে
বিক্রির জন্য।
গত বছরের তুলনায় এবার পশুর ছাল ভুষি খুদ বিছালীসহ সব ধরনের
খাদ্যেও দাম বেড়ে যাওয়ায় বাছুর গরুর দামও বেড়েছে
অস্বাভাবিক ভাবে। বেড়েছে ছাগলের দামও। একটি ছোট
বাছুর গরুও ৫০ হাজারের নিচে মিলছেনা। এক বছর পালনের পরে
একলাখ বিক্রি করলেও ১০/২০ হাজার টাকা লাভ করা কষ্টকর হয়ে
গেছে।
কুমারখালী উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়,
একটি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নে এবছর কোরবানির ঈদকে
সামনে রেখে ৩ হাজার ৭৯৩ টি ছোট বড় খামারে ২৩ হাজার
১৪২টি পশু কোরবানীর জন্য প্র¯‘ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ষাঁড় ৯
হাজার ৮৩২টি, বলদ ৫ হাজার ৭২৭টি, মহিষ ১৭ টি এবং ছাগল
৭ হাজার ৩৫৭টি।
উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের খামারি রাজু
মোল্লা বলেন, সারা বছর গরু মোটাতাজাকরণ করি
কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। বড় এবং দেখতে সুন্দর গরুগুলো
কেবল মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রির জন্য ভালো পুষ্টিকর খাবার
দিয়ে পালন করি। ঈদে সেগুলো যদি বিক্রি করতে না পারি তাহলে
অনেক লোকসান হবে। আরেক খামারি রাজীব বলেন, দেশে এখনও
বাজার পরি¯ি’তি ভাল হয়নি। এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি
গরুর ভালো দাম না পাই তাহলে আমাদের দুঃখের সীমা থাকবে
না।
আলাউদ্দিন নগরের খামারি আঃ জব্বার জানান, ৮টি গরু লালন
পালন করেছি কোরবানির আশায়। ঈদের বাজার সন্নিকটে। দাম
নিয়ে আতঙ্কে আছি। তিনি জানান, গত বছর দেড় লাখ টাকা
দামের একটি ষাড় অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে। অন্যগুলোর দাম না
পেলে খামার শেষ হয়ে যাবে। সদকী ইউনিয়নের দরবেশপুর
গ্রামের খামারি সোহেল রানা বলেন, গত বছর সাত লক্ষ টাকা
লোকসান হয়েছিল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ আলমগীর হোসেন
এবিষয়ে বলেন, আমরা সারা বছর খামারিদের সার্বিক খোঁজ
খবর রেখেছি, দিয়েছি সেবা ও পরামর্শ।
উপজেলার যদুবয়রা, আলাউদ্দিন নগর, কুমারখালী ও বাঁশগ্রাম
হাটে মোটামুটি ছোট ও মাঝারী ধরণের গরু উঠলেও
আশারুপ কেনাবেচা নেই। অনেক খামারী ও কৃষকেরা
প্রতিবছরের ন্যায় ঢাকা চট্টগ্রাম ও সিলেটে গরু নিয়ে
যাওয়ার জন্য প্র¯‘তি নি”েছ। তবে সরকারী নির্দেশে কীভাবে
হাট পরিচালিত হবে তা নিয়ে খামারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তার শেষ
নেই।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্পূর্ণ
দেশীয় পদ্ধতিতে হৃষ্টপুষ্ট করায় কুষ্টিয়ার গরুর ভালো চাহিদা
রয়েছে। এসব গরু কুষ্টিয়ার মানুষের ৩০ শতাংশ চাহিদা
মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা
হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, এবারও কিছু কিছু খামারি
অনলাইনে গরু বিক্রির কার্যক্রম চালাবে।