জেলার কুমারখালীর বিভিন্ন এলাকায় ফসলের জমিতে স্থায়ী বাগান বাড়ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। সার, বীজ এবং কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য শস্যসহ সব ধরণের ফসল আবাদে খরচের তুলনায় উৎপাদন ও আয় কম হওয়া, আর তুলনামূলক কম পরিশ্রম, সর্বোপরি বছর শেষে মোটা অংকের টাকা পাওয়ায় কৃষকেরা মওসুমী ফসল ছেড়ে স্থায়ী বাগানের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। এতে দিন দিন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও হচ্ছে প্রবল ।
উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, শিলাইদহ ইউনিয়নের কয়েকজন স্থায়ী বাগান মালিক জানান, সবজি জাতীয় ফসল যেমন বেগুন, পটল, মূলা, শিম, মশুর, কলাই, মরিচ, কলা, গম বেশী আবাদ করা হয়ে থাকে। এসব ফসল আবাদ করতে সার, বীজ ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। কিন্ত সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের শ্রমের মূল্য বেশি হওয়ায় উৎপাদন
আয় খরচের তুলনায় অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি শুরু করেছে বৈরিতা, সময় মত বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে জমিতে সেচ দিতে হয়, খরচ করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ, কিন্ত আশানূরূপ ফসল পাওয়া যায় না। এতে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
অপরদিকে আম, লিচু কিংবা কাঁঠালের স্বায়ী বাগান তৈরি করায় কৃষকেরা প্রতি বছর অল্প শ্রমেই পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। যার ফলে খাদ্যশস্য আবাদ ছেড়ে দিয়ে কৃষকেরা ফলজ আম, লিচু, পানের খর, বরই, কলা, কাঁঠাল আর বনজ মেহগনি, শিশু, ইপিল-ইপিল, বকাই নিম, আকাশ মনি প্রভৃতি গাছের বাগান গড়ে তুলছে। একটি বাগান হয়ে গেলে তার পাশের জমির মালিক স্থায়ী বাগান করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, পাশের জমির গাছের ছায়ার জন্য ফসল আর ভালো
উৎপাদন হয়না, তাই বাধ্য হয়েই তাকে স্থায়ী বাগান গড়তে হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বিভিন্ন স্থায়ী বাগান বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে।এদিকে বাগান বৃদ্ধির সাথে সাথে গড়ে উঠছে নতুন নতুন নার্সারী। উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি
জানিয়েছেন, তাদের সমিতিতে ২২টি নার্সারী ছাড়াও অনেকগুলো ছোট ছোট নার্সারী বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন করে চলেছে। আবার কিছু কিছু এনজিও সংগঠন এবং ব্যাংক- বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর গাছের চারা বিতরণ করে। বসত
বাড়িতেও বাড়ছে গাছপালা।স্থায়ী বাগান প্রতিবছর বাড়ছেই। তবে ইট ভাটাগুলো বৃক্ষ নিধনে পিছিয়ে নেই। প্রকাশ্যেই তারা হাজার হাজার মন গাছের খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো অব্যহত রেখেছে।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৪ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন স্থায়ী বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ২ শত ৫ হেক্টর ফলজ ও ১ শত ৪৫ হেক্টর বনজ বাগান রয়েছে।
প্রতি বছর স্থায়ী বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যদুবয়রা, কয়া, শিলাইদহ, পান্টি, চাপড়া, গোবরা চাঁদপুর, নন্দলালপুর, জগন্নাথপুর ইউনিয়নে স্থায়ী বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কেশবপুরের (অবঃ) মেজর শমসের আলীর বিশাল আম বাগান সবার দৃষ্টি কেড়েছে। সমগ্র উপজেলায় মাছ চাষের পুকুরের পাড়ে উন্নত জাতের আম গাছ রোপন এখন মালিকদের অন্যতম শখ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এব্যাপারে বলেন, নতুন নতুন আম ও লিচুর জাত আবিষ্কার হয়েছে। চাষীরা তার দিকে ঝুঁকছে,
বাগান গড়ে তুলছে। তিনি আরো বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক এবং অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কৃষকেরা স্থায়ী বাগানের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তার মতে, এভাবে ফসলী জমিতে স্থায়ী বাগান তৈরি অব্যহত থাকলে কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে মুনাফা বেশী পেলেও দেশে খাদ্য ঘাটতি আরো বৃদ্ধি পাবে। উপজেলা বন কর্মকর্তা অবশ্য আরো স্থায়ী বাগান তৈরির পক্ষে। তার মতে, দেশে মূলতঃ ১৭-১৮ ভাগ বন রয়েছে। অথচ একটি দেশে সমভূমির ২৫ ভাগ বন থাকা আবশ্যক বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।