হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণন নামের পূর্বে “ডাক্তার” উপাধি লিখবে
আছে তার “আইনগত বিজ্ঞপ্তি”
==================================সম্প্রতি গত চব্বিশ মে দুই হাজার একুশ তারিখে রাজবাড়ীর কালুখালীর বাংলাদেশ হাট নামক স্থানের একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রনজিৎ বাবুকে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে জেল ও জড়িমানা আদায় করে। সেখানে বিচারক মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০।’এর দুটি ধারায় এই রায় দেন। কিন্তু দেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যাবস্থার জন্য জন্যও রয়েছে ভিন্ন নীতিমালা ও গেজেট। তিনি তার অনুসরণ করেননি। হোমিও চিকিৎসকদের ব্যাপারে যেনীতিমালা আছে তার নাম “দি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩”।আর অ্যালোপ্যাথিকদের জন্য যে আইন তা হলো-‘মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০।’ এখন অ্যালোপ্যাথির আইনে হোমিওপ্যাথিকে আর হোমিওপ্যাথির আ্ইনে অ্যালোপ্যাথিকে যারা পদক্ষেপ নেন তাদের জন্য আমার আফসোস হয়। আফসোস হয় এ কারনে যে, তারা ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অথবা ওই অঞ্চলের দাদালদের প্ররোচনায় টার্গেট করে একটু যশ-খ্যাতিমান হোমিও ডাক্তারদেরকে ডাউন করার অপচেষ্টাগুলো করে দেশবাসীকে কী ধরণের বার্তা তারা দিতে চায়, তা আমার বোধগম্য নয়।
প্রতিবছরই দেশের কোথাও না কোথাও শোনা যায়, প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের টার্গেট করে তাদের চেম্বারে চেম্বারে মোবাইল কোর্টের নামে জেল-জরিমানা ও সামাজিক ভাবে অপদস্ত করে থাকেন। আর আমার ধারণা তারা, ঐসকল চিকিৎসকদের প্রতি বিরাগভাজন হয়েই এসব টার্গেট নিয়ে থাকেন প্রশাসন। কারণ, তারা যদি মূলত আইনি ব্যবস্থা কায়েম করার মানসিকতায় এই সকল অভিযান পরিচালনা করে থাকতেন তাহলে দেশের সকল হোমিওপ্যাথদের একচেটিয়া আক্রমণের মাধ্যমে দমন তথা সমস্ত চেম্বার বন্ধ করে দিতে পারতেন। তারা তা না করে, মাঝে মাঝে বেছে বেছে এই ধরণের বমাবাইল কোর্ট নামক কর্ম করে থাকেন।
ধরে নেওয়া যাক ঐ সকল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ ভুল করেছেন, তাই তার শাস্তি হওয়া দরকার।কিন্তু সেখানেও ভুল করে থাকেন স্বজ্ঞানে নাকি অজ্ঞানে তা বোঝার জন্য একটু আলোচনার প্রয়োজন।গত 24মে 2021 তারিখে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বাংলাদেশ হাট নামক বাজারে অভিযান চালান, আমি সেই ঘটানার পূর্ণ একটি খবর তুলে ধরতে চাই। – ‘রাজবাড়ীর কালুখালীতে ভুয়া পদবী ও ডিগ্রী ব্যবহার করায় এক হোমিও চিকিৎসককে ভ্রাম্যমান আদালতের এক বছরের কারাদন্ড এবং ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে রাজবাড়ীর সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে কালুখালী উপজেলার বাংলাদেশ হাট এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সে সময় দয়াল হোমিও-এর চিকিৎসক রণজিত সরকার (৫৫)কে মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৯ (১) ধারার অপরাধে, ২৯(২) ধারায় এক বছরের কারাদন্ড এবং ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রণজিত সরকার (৫৫)কে মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৯ (১) ধারার অপরাধে, ২৯(২) ধারায় এক বছরের কারাদন্ড এবং ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রাজবাড়ীর সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আসাদুজ্জামানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি উনি ছাত্র জীবনে কিছুটা পড়া-শুনা করলেও এখন হয়ত তা করেন না। অথবা পড়াশুনা করলেও স্বজ্ঞানে আইনের ফাঁক তালাশ করেই একজন হোমিও চিকিৎসককে মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৯ (১) ধারার অপরাধে দন্ডিত করতে পারেন।
ডাক্তার রঞ্জিত সরকার আসলে ওখানে কি ঔষধ বিক্রী করছিলেন? অ্যালোপ্যাথিক মেডিসিন বিক্রয় করেছেন? তিনিতো হোমিওপ্যাথ-ই। আর হোমিওপ্যাথকে অ্যালোপ্যাথিক আইনে ধরা কতটুকু আইনসিদ্ধ?
এব্যাপারে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড এর একটি বিজ্ঞপ্তি আছে। সে ব্যাপারে বিচারককে জানা উচিত ছিলো।”দি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩” এর ২৫, ২৬, ২৭, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬ এবং ৩৭ নং ধারা মোতাবেক ডিএইচএমএস পাসকৃত সনদপত্র প্রাপ্তরা বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড হতে নিবন্ধিত (চিকিৎসক পেশার রেজিষ্ট্রেশন সনদপত্র) ও বিএইচএমএস পাসকৃত এবং স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা/সিদ্ধান্তের আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (হোমিও ও দেশজ) এএমসি কর্তৃক নিবন্ধিত (চিকিৎসক পেশার রেজিষ্ট্রেশন সনদপত্র) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ তাদের নামের পূর্বে, প্রেসক্রিপশন প্যাডে, ভিজিটিং কার্ডে এবং সাইন বোর্ডে ডা. (ডাক্তার) শব্দটি উপাধি হিসাবে ব্যবহার করতে/লিখতে পারবেন এবং হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি অনুযায়ী সর্বসাধারণের জন্য চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) ও বিএইচএমএম (হোমিওপ্যাথি) পাসকৃত হয়ে চিকিৎসক পেশায় রেজিষ্ট্রেশন সনদপত্র প্রাপ্ত রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ নিজ নিজ নামের পূর্বে “ডা.” (ডাক্তার) পদবি উপাধি হিসেবে ব্যবহার করবে এবং লিখবে তা উল্লেখ সহ রাষ্ট্রীয় হোমিওপ্যাথি কর্তৃপক্ষের আইনগত বিজ্ঞপ্তি ৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
(১) বাংলাদেশ প্রতিদিন (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০খ্রি.),
(২) দৈনিক ইত্তেফাক (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০খ্রি.),
(৩) দৈনিক যুগান্তর (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০খ্রি.) সমূহ।
আমি বলছিনা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারগণ ধোয়া তুলসির পাতা। তাদের কোন ভুল নেই এমন নয়। তারা অন্যায় করলে তাদের জন্যও তো একটি আইন আছে। “দি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩”। যা অল্টারনেটিভ এই পদ্ধতির শিক্ষা ও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদের জন্য আলাদা সরকারি হোমিওপ্যাথি অর্ডিন্যান্স আইন, বিধিমালা-নীতিমালা, গেজেট আছে। সেই আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়াই কি উচিৎ নয়?