কবি মোঃ আকরাম হোসেন খান।তিনি জন্মেছেন কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার তাহেরপুর গ্রামে। পিতাঃ মরহুম কিছমত আলী খান, মাতাঃ মরহুমা হাজেরা খাতুন। কবি সাত ভাই-বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। শিক্ষা জীবনে তিনি ধোকড়াকোল হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও এস এস সি পাশ করেন উপজেলার সেনগ্রাম হাইস্কুল থেকে। ( যশোর বোর্ড-১৯৮৬), এইচ এস সি-পাশ করেন কু্মার খালী মহাবিদ্যালয়-কুষ্টিয়া থেকে। (যশোর বোর্ড১৯৮৮), গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন- পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ(১৯৯০) এবং মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(১৯৯২)। থেকে। তাঁর বর্তমান কর্মস্থল- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা সেনানিবাস। এই নিভৃতচারী কবি মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। স্কুল ও কলেজ ম্যাগাজিন সমূহে কবিতা লিখে শৈশবেই বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।তিনি ছিলেন তুখোর ও মেধাবী ছাত্র হিসেবেও পরিচিত। শ্রেণী শিক্ষকগণ মোঃ আকরাম হোসেন খান এর কবিতা ও সাহিত্য ভাবনাকে ভূয়সী প্রসংশা করতেন। সরকারের প্রশাসনিক পদে চাকুরী করলেও নিরবে সাহিত্য সাধনা করে চলেছেন। তার কবিতা থেকে গ্রামীণ জনপদের সোঁদা মাটির গন্ধ তিরতির করে বেরিয়ে আসতে থাকে। এই গুণী কবির কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। তিনি বাংলাদেশ ভূমি অনলাইন নিউজ পোর্টালের একজন উপদেষ্টা ।আমরা কবি আকরাম হোসেন খান’র কয়েকটি কবিতা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরলাম। আশা করছি সম্মানিত পাঠককূল এতে কবিতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনে ব্যার্থ হবেন না।
এক.
অভিপ্রায়
মোঃ আকরাম হোসেন খান
আজ বাদলের,
মুখর ধারায়,
শুধুই আমার মন হারায়।
খুঁজি তোমায়,
তারায় তারায়,
মোর মন ময়ূরী হাত বারায়।
আজ বাদলের,
উতল হাওয়ায়,
মন ছুটে তাই ছন্দ ছায়ায়।
জেগে আছো,
আমার হিয়ায়,
হারাবো আজ স্বপ্ন খেয়ায়।
দুই.
আমার ছোট্ট গাঁ
মোঃ আকরাম হোসেন খান
ভ্রমরের গুঞ্জনে, মন ছুটে আনমনে,
আমার ছোট্ট গাঁয়।
বসিয়া তরু ছায়,
কোকিলের কুহুতানে,
মন ছুয়ে যায় মেঠো পথের বাঁকে,
কদম শাখে দুলিতেছে ফুল পূবালী বায়।
দক্ষিণা সমীরণে মন বাতায়নে, স্মৃতিরা দোলা দিয়ে যায়।
আমার গাঁয়ের ধারে মহুয়ার বনে গন্ধে মৌ মৌ মন।
উদাসী মলয় ঘুরিয়া ঘুরিয়া, যেন গন্ধে মাতায় বন।
বকুল তলে, পুকুরের জলে, ভেসে চলে ঝরা বকুল।
মালার লাগি গ্রামীণ কিশোরী ফুল কুড়াতে ব্যকুল।
আঙ্গীনার পাশে, শিউলী গাছে, ফুুটেছে শিউলী ফুল।
সন্ধ্যা ক্ষণে ঝিরি ঝিরি বাতাসে সারা আঙ্গীনা মুশগুল।
আমার গাঁয়ের পথের ধারে পলাশ, শিমুল সারি সারি।
লালে লাল সাজিয়াছে যেন, গাঁয়ের সকল বাড়ী বাড়ী।
পথের ধারে ফুটে থাকা নাম না জানা কত যে বুনো ফুল।
দামাল হাওয়ায় উড়ছে যেন গেঁয়ো কিশোরীর লম্বা চুল।
আমি রয়ে যাবো বন বীথির ছায়, আমার ছোট্ট গাঁয়।
আমি মিশে যাবো, নাম না জানা বুনো ফুলের ছায়।
আমি বকুল ফুলের সুবাস হয়ে রয়ে যাবো আমার গাঁয়।
আমি কৃঞ্চচুড়ার লাল মেখে, মিশে যাবো পূবালী বায়।
—-০—
তিন
মুক্তির আহ্বান”
মোঃ আকরাম হোসেন খান
ওগো কবি দিশারীদের মত আমিও বলি তাই।
তুমি গর্জে ওঠো স্ফুলিঙ্গের মত আমি তা চাই।
কবি তব কবিতার বারুদের গন্ধে মুছে যাক অন্যায়।
সকল দুরাচার, ব্যভিচার নিপাত যাক, তব কবিতার বন্যায়।
আছি, বলছিতো থাকবো, সদা সর্বদা ঢাল হাতে পাশে।
পাষণ্ডরা কালো হাত নিয়ে, যদি তোমায় রুখতে আসে।
জানি, তুমি নও ভীরু, তব আছে লেখনীর তরবারী।
তব পদ চিহ্ন পৌঁছিয়ে যাবে বাংলার বাড়ী বাড়ী।
জেগে ওঠো কবি, সাথে নিয়ে তোমার লেখনীর দুর্দমনীয় তলোয়ার।
ঘুচাতে হবে আজকের ঘোর অন্ধকার, বলেছেন দিগ্ববিজয়ী কবি দেলোয়ার।
আজ আছে যত কবিতার সৈনিক, লেখে যাক তারা দৈনিক।
অত্যাচারীর খড়গ, ভন্ড পূজারীর অর্ঘ নয়তো বড়, বড় তারা দৈহিক।
তাইতো তৈরী হতে হবে আমাদের লক্ষাধিক কবিতার নির্ভীক সৈনিক।
চার
মমতার টানে”
মোঃ আকরাম হোসেন খান
কবি ওগো কবি, আমিও যে আছি তোমার সংগে।
সেই মেঠো পথের ধুলা দু’জনা মাখিবো সারা অঙ্গে।
তুমি পল্লীর মায়াবী সুরে বাজাবে বাঁশের বাঁশি।
আমি গাইবো পল্লী মায়ের গান, হাঁটবো পাশাপাশি।
হিজল শাখে পাখপাখালির কলতানে মুখরিত হবে তব প্রাণ।
হে কবি দেখিও, তোমার কবিতা ফিরে পাবে প্রকৃতির ঘ্রাণ।
বসিবে তুমি বন বীথি ছায়, জড়ায়ে রাখিবে তোমায় মায়ায় মায়ায়।
মুখে পুরে পাঁকা ঢ্যাপুর ফল, হাঁটিবে তুমি তরুর ছায়ায় ছায়ায়।
মেঠো পথের সীমানায় গড়ে চলে কৃষকের গরুর গাড়ী।
দেখিবে তুমি ধানের মলন মলা হচ্ছে কৃষকের বাড়ী।
মাঠে মাঠে কৃষকের ধান কাটা হয়ে গেছে সাড়া।
কোন সে কারীগর কাটিয়াছে ধান, ন্যাড়া রহিয়াছে খাড়া।
হৃদয়ের মাধুরী দিয়ে দেখিবে তুমি কলমী লতার ফুল।
মেঠো পথে হেঁটে চলা গ্রামীণ কিশোরীর যেন কানের দূল।
মোর রক্ত আছে মিশে, গ্রামের সোনালী ধানের শীষে।
আধুনিক নগর দিয়েছে অনেক, তবে ধরে রাখিবে কিসে?
ওগো কবি আমিও যাবো, যাবো আমি তোমার সংগে।
মিশে যাবো মায়া মমতায় জড়ানো পল্লী মায়ের অঙ্গে।
সেই মেঠো পথের ধুলা, দু’জনা মাখিবো সারা অঙ্গে।
পাঁচ
“পল্লী মায়ের আকুতি”
মোঃ আকরাম হোসেন খান
ঐ যে সূদুর গাঁ দেখা যায় তেপান্তরের বাঁকে।
দোয়েল, কোকিল, ময়না, টিয়া আজও সেথায় ডাকে।
সেথায় আছে ছোট্ট কুটির পল্লী মায়ের বাস।
তারই মাঝে কাটে তাহার সকাল, দুপর, সাঝ।
কত রাখাল গান গেয়ে যায় তেপান্তরের বাঁকে।
তাইনা শুনে পল্লী মায়ের অনেক সময় কাটে।
পল্লী মায়ের দুঃখ ভরা সারা অন্তর জুড়ে।
তাহার ছেলে শিক্ষা নিয়ে যাচ্ছে চলে দূরে।
মাকে তোরা, যাসনে ভুলে ইট পাথরের ভীড়ে।
ইট পাথরের দালান কোঠায় বিজলী বাতি জ্বলে।
পল্লী মায়ের কুড়ে ঘড়ে মাটির প্রদীপ,
কেরোসিনে চলে।
পল্লী মায়ের নাওয়া খাওয়া দীঘির জলেই চলে।
মা’যে তোদের বিয়োগ ব্যথায় ভাসছে চোখের জলে।
পল্লী মা’যে ডাকছে তোদের করুন হৃদয় খুলে।
তোরা সবাই জ্ঞানী ছেলে আয়না এবার ফিরে।
জ্বালনা এসে জ্ঞানের প্রদীপ মায়ের ছোট্ট নীড়ে।