সুরমা থেকে কালনী
বিপন্ন বিকেল ছেঁড়া ঘুমন্ত নূপুর
বাউলিয়ানা জোছনা খুলেছে আঁচল
উজান হাওয়ার পথ কাঁটা-গুল্ম বন
বিছানা বিছায়ে রাখে মুখোশ-আড়াল।
অন্ধকার বিনির্মাণে;
মধ্যরাতের ধার্মিক পোহায় আগুন।
তবু—
শীতলপাটির জোছনারা তেপান্তরপাড়;
হাওড় একাই হেঁটে পার হয়ে যায়—
মৃত্যুর খোঁয়াড়… ক্লান্তিহীন, বোবা ও বধির।
রোদ্দুর-নিশ্বাসে শুধু শেকড়ের টান!
সরলবক্রের জ্যামিতিতে সমস্ত পুরাণ অলংকারে
মানুষেরই আর্তনাদ।
সেখানে রক্তাক্ত—একমাত্র যন্ত্রণা, রূপক।
বিশ্বাসের প্রজ্বলনে—
জন্ম-জন্মান্তর মাটির মায়ার সন্নিহিত ভোরে
দুর্মর অক্ষর লেখে কবিতার স্বপ্ন, প্রাণের ঐশ্বর্য
সুরমা-নিষিক্ত জলে।
শুধু দাগ রেখে যাই—অনন্ত সাঁতারে, আর
দেহ থেকে খুলে রাখি লোবানের গন্ধ।
সমস্ত উজাড় করে তুলে রাখি—
কিছু নিষিদ্ধ-শকুন
রাষ্ট্রের স্মারকে ছাপ্পড় মারবে বলে
আবার মানুষ বেশে আসি যদি ফিরে…
কোনো এক শীতকালে।
একার সন্ন্যাস
কলার পাতায় কয়লায় লেখা দু’চার চর্যা…
মুছে ফেলি একা পোড়া রৌদ্রের উষ্ণ-তাপ।
সংঘ ছাড়াই প্রসারণ হয়! কলমের কালি?
প্রতিষ্ঠানের মহাজনী সুদ বাড়ে কবিতায়
দলবদ্ধ, ও… কানার মিছিলে ছোটে প্রতাপ।
যে অক্ষমতা—বিশ্ব শোকেই করে ফালিফালি!
উত্তরীয়র লোভাতুর-বিষ ম্যাপলপাতায়…
লিখে রাখে ধ্বনি, স্বর-যন্ত্রণা, অবাক পৃথিবী।
তামাটে বালুর তল্লাটে খুঁজি জলজ-জীবন।
পরিচয়হীন আত্মমগ্ন একা-সন্ন্যাসে—
পরিণত শ্লোক, প্রতিটি সুক্ত বাঁধি বেহিসেবি।
যে শোক একার…; ফর্মা ফর্মা বাতাসের ঘ্রাণ, হয় কি ওজন তার?
দুপুরের নূপুর
এক অচেনা দুপুর। ব্যর্থ কোলাজেই…
সাঁকো দিয়ে হেঁটে আস
কাল্পনিক রচনায়।
ভাঙা সরোদ সঙ্গমে—প্রিয় নলতায়
সরিষা ফুলের হাওয়াকলে
বেজে গেছ—একাকী তানপুরা।
বকুল ফুলের চোখ, বিষণ্ণতায় পুড়েছে যত
ততক্ষণে মন্দিরায়… পুড়েছে ধ্যানীর আশ্রম।
জানি,
অপেক্ষার সেই ভার—বাঁধের ওপাড়ও
ভেঙে পড়ে…
সম্পাদ্যের বহুরৈখিক কলস।
বহুলজোনাক সেই রাত। উপপাদ্যের প্রমাণ
সহ্য করার নিমিত্তে…
কবরের দিশে ছোটে পাতাবাহারের নৈঃশব্দ্য।
মূক ও বধির—থিক কুয়াং ডুকের স্থির, অবিচল
সমবেত প্রার্থনায়; বিসমিল্লাহ খাঁ… সানাই বাজাচ্ছে।
রুহু শুষে নিয়ে… তুমিও কি বাজাচ্ছ নূপুর?
অর্থহীন অর্থ
মেটালিক পোড় খাওয়া উষ্ণ আর্দ্রতার গুপ্ত বিষ
শামুক হা-মুখ খোলে নিয়নের আলো খুব ক্ষীণ,
ফোঁটাফোঁটা দুঃখ-ব্যথা বিনয় সময়ে অর্বাচীন
দিশাহারা মাঠজুড়ে পাতার উদরে জাগে শিষ।
কোথাও পায় না খুঁজে সোনালি মায়ার রামধনু
রঙেঢঙে কাঁচা-পাকা ঘোরলাগা আহ্লাদি সংসার,
ফেলে আসি বহুদূর; ঝিলম নদীতে পোড়ে, আর
ভেসে আসে তানপুরা। নহলা জ্বালায় ক্ষুদ্র তনু।
বিস্বাদের পাড় জানে, ব্রাকেট-কোলন-ড্যাশ শেষে
তটের বিবাগী হাসে। সুদূরের ভেসে আসা ফেনা
কাঁচুলির পাশে জমে হিসাবের পাতাজুড়ে দেনা
রেখে গেছে পলাতক কাককালো মেঘেদের দেশে।
ক্ষুদ্র আলোর কণাও ঝঞ্ঝার প্রহারেও জ্বলে স্বাতি
বিন্দু… এক পথরেখা—সিন্ধুতে জ্বলে হৃদয়ে বাতি।