আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ বিদ্রোহী কবির ১২২ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
ঊনিশ শতকের কুমারখালী এবং কাজী নজরুল ইসলাম
—————————————————-
সোহেল আমিন বাবু
—————————————————
কুমারখালী কুষ্টিয়া অঞ্চলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত প্রাচীন জনপদ। শিল্প- সাহিত্য-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই কুমারখালীর নাম ডাক। কৃষ্টি ও সৃজনশীলতার আলোঘর কুমারখালী। ঊনিশ শতকে কুমারখালীতে যে সকল বোদ্ধা, ঋদ্ধ, জ্ঞানী-গুণী, কবি,লেখক -সাহিত্যিক বসবাস করতেন তাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে মহিয়ান। তাঁদের সৃজন- কৃতকর্মের আলো দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে আছরে পরেছিল।
বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক,ছড়াকার এবং বৃটিশ সরকারের আমলা অন্নদাশংকর রায় কুষ্টিয়া মহকুমার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ‘কুিষ্টয়ার স্মৃতি’ প্রবন্ধে কুমারখালী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লেখেন,‘যার নামে মহকুমার(কষ্টিয়া) নাম সেই শহরটা অর্বাচীন। তার চেয়ে পুরনো শহর কুমার খালী’। কুমারখালীর ইতিহাস -ঐতিহ্য সম্পর্কে ‘কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ জীবনী গ্রন্থে ড. আবুল আহসান চৌধূরীর বিশ্লেষণ ; ‘ শিক্ষা-সাহিত্য- সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কুমারখালীর ইতিহাস অর্বাচীন নয়। নবাবী আমলে এখানে টোল-চতুষ্পাটি- মক্তব- পাঠশালা ছিল’।
১৮৬৯ সালে জনগনের নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য কুমারখালীতে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় আন্দোলন ও কৃষক সংগ্রামে কুমারখালীর ভুমিকা বিশেষ গৌরবের। ফকির বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, কৃষকের নীল বিদ্রোহ এই অঞ্চলের অবদান জাতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়। বিপ্লবী বৃটিশবিরোধী নেতা বীর মুজাহিদ কাজী মিয়াজনের(১৮০২-১৮৬৪) ঊদ্যোগে কুমারখালীকে কেন্দ্র করে অর্থ ও রসদ সংগ্রহের ঘাটি তৈরী হয়েছিল। এখান থেকে যোদ্ধা তৈরী করে বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে পাঠানো হতো। বৃটিশ পুলিশের হাতে আটক ১১জনের মধ্যে বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামীযোদ্ধা জাফর থানেশ্বরী তাঁর‘ আন্দামান বন্দির আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লেখেন : ‘ ১৮৬৩ সালে আম্বালা ষড়যন্ত্র মামলায় যে এগারো জন বৃটিশ বিরোধী নেতা গ্রেফতার ও অভিযুক্ত হন তাঁদের মধ্যে কাজী মিয়াজান ছিলেন একমাত্র বাঙালি।’ প্রহসন মূলক বিচারে তাঁর যাবৎজীবন কারাদন্ড হয় এবং ১৮৬৪ সালে আম্বালা জেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । তাঁর সমাধী ভারতের আম্বালা জেলের পাশে এখনও দীপ্তমান।
১৮৫৭ সালে কুমারখালী পাবনা জেলার একটি মহকুমা ছিল। মহকুমা শহর হিসেবে তখন কুমারখালী একটি সাজানো গোছানো শহর ছিল যা কুন্ডুপাড়ার বাড়িগুলোর দিকে নেত্রপাত করলেই আন্দাজ করা যায়। শান-সওকতে চলছিল ভালই। ১৮৭১ সাল কুমারখালীর মানুষের জন্য বিপর্যয়ের কাল। এ বছরই নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমায় সামিল হয়ে কুমারখালী তার মহকুমার মর্যাদা হারিয়ে পুনরায় থানায় পরিনত হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের কারনে কুমারখালীবাসী অনেক প্রপ্তি থেকে পেছনে পরে যায়।
# কবি নজরুল ও সাহিত্যের বাতিঘর কুমারখালী
আগেই বলেছি ঐতিহ্যগতভাবেই কুমারখালীর রয়েছে সমৃদ্ধ শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার খ্যাতি ও সুনাম। অতীতে প্রতি বছরই লেগে থাকতো নানা ঊৎসব, চলতো আয়োজন।পাড়ায় পাড়ায় নটক,যাত্রা,জারি-সারি, পালাগান আর বাঊল গান তো ছিলই। তারই ধারাবাহিকতায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কুমারখালীতে সংবর্ধনা জানানো হয়। রূপরূপালি কুমারখালী। আলোকিত বাতিঘর। এই বাতিঘরের ক্ষুদ্র একজন সৃজনকর্মী হিসেবে এর অতীত ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য- সংস্কৃতির পাঠ বিদগ্ধ পাঠকের সন্মূখে বারবার তুলে ধারার চেষ্টা করেছি বা করে যাচ্ছি। আমার আজকের লেখার প্রসঙ্গ বাঙালির প্রিয় কবি, সাম্যবাদের কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি, অসাম্প্রদায়িক কবি, সর্বপরি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং তাঁর কুমারখালী আগমন। সে সময়ে প্রিয় কবিকে কারা কুমারখালীতে আনলেন, সম্বর্ধনা দিলেন এ সম্পর্কে আমার অনুসন্ধিৎসা থেকেই এই লেখার অবতারনা। দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিক কুমারখালীতে এসেছেন সত্য। সেটা অনেকটাই ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের কুমারখালীর শিলাইদহে বসবাসের করণে। রবীন্দ্র সমসাময়ীক্ সময়ে কবি লেখক সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রনে শিলাইদহে আসেন পল্লী প্রকৃতির সান্নিধ্যে। কাঙাল হরিনাম মজুমদারের স্মৃতিতীর্থ দেখতেও অনেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কাজলাদিদি’র কবি যতিন্দ্র মোহন বাগচী হরিনাথ ধামে এসে বিনম্রশ্রদ্ধায় কাঙালকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন। যাঁদেন সৃজন বদৌলতে কুমারখালীর পরিচিতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়েছিল তাঁদের মধ্যে বাঊল কবি লালন ফকির, গ্রাম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, বিখ্যাত ‘এডিটর মহাশয়’ কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদক ও সাহিত্যিক জলধর সেন, কালজয়ী গ্রন্থ ‘বিষাদসিন্ধু’খ্যাত সাহিত্যিক ও ‘হিতকরী’ সম্পাদক মীর মশাররফ হোসেন, ‘রদ্দে নাড়া’র লেখক মুন্সি এমদাদ আলী, ‘সিরাজ ঊদ দৌলা’ নাটকের লেখক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়,কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, সাহিত্য সেবক মাহাতাব ঊদ্দীন ওয়ালী, শচীন্দ্রনাথ অধিকারী, খোন্দকার আজাহারুল ইসলাম, কবি গোলাম রহমান, ভোরানাথ মজুমদার প্রমূখ সে সময় কুমারখালী থেকে আলো ছড়াচ্ছেন। নিশি কান্তের সম্পাদনায় ১৯২১ সালে কুষ্টিয়া থেকে ‘জাগরণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ হতো। এই পত্রিকার সাহিত্য পাতা ছিল বেশ সমৃদ্ধ। উল্লেখিত নজরুল সমসাময়ীক কবি সাহিত্যিক সে সময় ‘জাগরণে’ লিখতেন। লিখতেন নজরুলও। নজরুলের আগে-পরে সাহিত্যক্ষেত্রে অবদান রাখা কুমারখালীর এসব কবি সাহিত্যিক সম্পর্কে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিশ্চয় অবগত ছিলেন। তাছাড়া কবি রাজনৈতিক কারণেও কুষ্টিয়ায় এসেছেন। ড. আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধে বলেন: ‘ রাজনীতির সুত্রে নজরুলের সঙ্গে কুমারখালীর বানিয়াপাড়ার মাওলানা আফছান ঊদ্দিন আহমেদ(১৮৮৬-১৯৫৯) ও তাঁর অনুজ অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রি সামসুদ্দিন আহমেদের(১৮৮৯-১৯৭৯) সাথে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল। রাজবন্দী হিসেবে মাওলানা আফছার উদ্দিন আহমেদ ও নজরুল একত্রে হুগলী জেলেও ছিলেন এক সময়(১৯২৩)।’(সোহেল আমিন বাবু সম্পাদিত নজরুল জন্মশতবার্ষিকী১৯৯৮ ‘ উন্নত মম শির’ স্মরণিকায় ছাপা প্রবন্ধ)
আফছার উদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রখ্যাত খেলাফত নেতা ও বৃটিশ বিরোধী। হুগলী জেলে কবির সাথে তাঁর মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কবি প্রথম তাঁর কাছে কুমারখালীর রাজনীতি- সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হন এবং সময় পেলে কুমারখালী আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন । এ প্রসঙ্গে লেখক খোন্দকার আব্দুল হালিম তাঁর প্রবন্ধে বলেন: ‘কবি তাঁর কুষ্টিয়া সফরের এক পর্যায়ে কুমারখালী থানার বানিয়াপাড়া গ্রামের বিখ্যাত বাড়ি ‘আহমাদবাগে’ এসেছিলেন।’
নজরুল জীবনের পূর্ববঙ্গ- পর্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য-বিবরণ ও বিশদ ইতিহাস সহজপ্রাপ্য নয়। ‘নজরুলের সফর- সংবাদ সবসময়ই যে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হতো, তা নয়। তাই বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে নজরুলের সম্পর্কের খতিয়ান ও তথ্যোপকরণ আজ প্রায় বিলুপ্ত ও অনেকাংশে দুস্প্রাপ্য- কিছু বা স্মৃতি – শ্রুতিতে আবদ্ধ। নজরুল ১৯২৭সালের মাঝামাঝি ও ১৯২৮ সালের রাজনৈতিক কারণে এবং ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি- মার্চ কৃষক সম্মেলন ও এক সংবর্ধনা- সভায় কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন, তা জানা যায়।’ প্রেক্ষাপটে নজরুলের স্মৃতিবিজরিত স্থান হিসেবে প্রান্তবর্তী সাংস্কৃতিক শহর মরমি সহিত্যের বাতিঘর কুমারখালীর নামও উল্লেখযোগ্য।
কুমারখালীর তেবাড়িয়ার কবি আব্দুর রহমান তখন (১৯০৪-১৯৮০)বয়সে যুবক। ইতোমধ্যে তাঁর উপন্যাস ‘কলঙ্কিনী’ ‘ইসলামী সারীগান’‘ নূরে বুলবুল বা ইসলামী গজল’ নামে বই প্রকাশিত হয়েছে। লেখা ছাপা হচ্ছে কোলকাতা- কুষ্টিয়ার সাহিত্য পাতায়। নজরুলের সাথে তাঁর মিষ্টি একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পেশায় হোমিও ডাক্তার আব্দুর রহমান কুষ্টিয়া ও কুমারখালীতে চেম্বার চালাতেন। হোমিও চিকিৎসক হিসেবে তাঁর সুনাম-সুখ্যাতি চারিদিকে। নজরুল কুষ্টিয়ায় আবস্থান কালে কবি অব্দুর রহমান সব সময় কবির পাশে ছায়ার মতো লেগে থাকতেন। আব্দুর রহমান কুষ্টিয়া কুমারখালীতে নজরুল সংবর্ধনার বিষয়ে আলোকপত করেছেন। সাপ্তাহিক দেশব্রতী কুষ্টিয়া ২৫ মে ১৯৯২ জেবুন নেছা জোছনা, ‘কুষ্টিয়ায় নজরুল সংবর্ধনা’ শীর্ষক এক লেখায় জানা যায়: ‘ এই নজরুল সংবর্ধনার অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত বিবরণ মেলে স্থানীয় এক সাহিত্যসেবী ডা: আব্দুর রহমানের কথকতায়। তিনি ছিলেন মূলত কবিও গীতিকার, পেশায় হোমিও চিকিৎসক। নজরুল সংবর্ধনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেছেন: ‘বাংলা ১৩৩৪ সাল। কাজী নজরুল ইসলামের কবি প্রতিভা তখন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সময় কুষ্টিয়ার সাহিত্যসেবীগন নজরুল সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। স্থানীয় যতিন্দ্রমোহন হলে সংবর্ধনা সভার জন্য স্থান নির্বাচিত করা হয়।’
এরপর ডাক্তার তাঁর স্মৃতি থেকে অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছেন এই ভাবে : ‘নিদৃষ্ট দিনে কবি সপরিবারে কুষ্টিয়ায় আগমন কররেন। স্টেশনে তাঁকে বিপুল ভাবে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হলো। সপরিবারে কবি হেমন্ত কুমার সরকারের বাসভবনে উঠলেন। বৈকালে যথারীতি ভাবে বিদ্রোহী কবির সংবর্ধনা আরম্ভ হল্ মুসলমানদের মধ্যে আমি(ড; আব্দুর রহমান) এবং কমলাপুর পিয়ারপুরের তোফাজ্জল হোসেন এই সংবর্ধনা সভায় যোগদান করি। সবাই তাদের নিজ নিজ কবিতা পাঠ করলেন্ আমিও নজরুলের প্রশস্তিমূলক আমার স্বরচিত কবিতা পাঠ করলাম। এই সংবর্ধনা সভায় কবি স্বয়ং তার বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করলেন ।ভাষনে বিদ্রোহী যা বলেছিলেন তা এখনও আমার কানে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ‘ আজ আপনারা আমায় যে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেছেন, এ শুধু আমার প্রাপ্য নয়, যুগে যুগে যত কবি এসেছেন তাঁদেরও প্রাপ্য। এই দান বাহক রূপে তাঁদের দরবারে পৌছে দেওয়াই আমার কাজ। আজ এই সংবর্ধনা সভায় আমার স্বজাতীয় দু’জন মুসলমান কবি ভাই কবিতা দ্বারা আমাকে অভবাদন জানিয়েছে সে জন্যে আমি অত্যন্ত আনন্দিত্’। (পূর্বক্তো পত্রিকা)
কুষ্টিয়ায় নজরুল সংবর্ধনার পরপরই কুমারখালীতেও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। কুমারখালীর কবি আব্দুর রহমান ঊদ্যোক্তাদের অন্যতম ছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন :‘ কুষ্টিয়ায় নজরুল সংবর্ধনার পরও নজরুল ইসলামকে কেঊ মুক্তি দিল না। প্রায় এ পাড়া ও পাড়ায় জলসা হতে লাগলো। নজরুল সে সব জলসায় কথায় ও কবিতায় প্রাণের বন্যার ঢেঊ তুলতে লাগলেন। এই সুযোগে কুমারখালীতে নজরুল ভক্ত সেরকান্দির আব্দুল গনি, কুন্ডুপাড়ার ভোলানাথ মজুমদার,গোড়া মৈত্র, আমি ও কুমারখালীর কয়েকজন ছাত্র কুমারখালীতে নজরুল সংবর্ধনা সভার আয়োজন নিয়ে মেতে ঊঠলাম।
কবিকে নিমন্ত্রন করার ভার পরলো আমার ঊপর। নিদৃষ্ট ট্রেন ফেল করায় পায়ে হেঁটে কুষ্টিয়ায় ঊপস্থিত হলাম। কবি সাহেব আমার নিমন্ত্রন গ্রহন করলেন। কুমারখালীর যোগেন্দ্রনাথ এম ই স্কুল প্রাঙ্গনে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হলো কবি এই সংবর্ধনা সভায়‘ জাতের নামে –হাতের মোয়া’ সঙ্গীতটি গাইলেনএবং বিদ্রোহী কতিা আবৃত্তি করলেন। কুমারখালীর মাটি , কুমারখালীর আকাশ সর্বপরি কুমারখালরি মানুষ সেদিন নজরুলকে পেয়ে ধন্য হয়ে উঠেছিল’। (প্রাগুক্ত পত্রিকা)
‘কুষ্টিয়ায নজরুল’ প্রবন্ধে ড. আবুল আহসান চৌধুরী লেখেন ‘কুমারখালীতে নজরুল আর এক সমাজ বিপ্লবী সাহিত্য সাধক কাঙাল হরিনাথ মজুমদরের( ১৮৩৩-১৮৯৬) প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কাঙাল কুটিরে গিয়েছিলেন বলে কাঙাল প্রপ্রৌত্র অতুল কৃঞ্চ মজুমদার সুত্রে জানা যায়। এই যোগাযোগ হয়েছিল মূলত কাঙালের জ্ঞাতি ও ভাতুষ্পুত্রে এবং কুমারখালীতে নজরুল সংবর্ধনার অন্যতম উদ্যোক্তা কবি ভোলানাথ মজুমদারের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায়।’
লেখক খোন্দকার আব্দুল হালিম তাঁর এক প্রবন্ধে নজরুল সংবর্ধনার মনোরম একটি খবর দিচ্ছেন এ ভাবে ; ‘ কবি তাঁর পরম বন্ধ হেমন্ত কুমার সরকার , নিশি কান্ত পাত্র ও অন্যন্য সফর সঙ্গীদের নিয়ে নৌকায় চড়ে কুষ্টিয়া থেকে কুমারখালী রওনা দেন । তিনি ছৈই ’র উপর বসে গান গেয়ে গল্প করে যেতে থাকেন । সা্ওঁতার ঘাটে একদল মেয়েকে কলসি কাঁখে পানি নিতে দেখে সুন্দর কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটি সফর সঙ্গীদের শুনিয়ে অবাক কওর দেন। বিকেল বেলা কুমারখালীর ঘাটে নেমে পায়ে হেঁটে শহরে যান। কবি আব্দুর রহমানকে সার্বিবক সহায়তা দেন কবিরাজ কে এম গোলাম সরওয়ার, আব্দুল ওয়াহিদ মিয়া , নন্দ কুমার, কবি ভোলানাথ মজুমদার , সৈয়দ আবুল ফজল প্রমুখ।’
নজরুল জীবনে কুমারখালীর পর্বটি এক অলিখিত অধ্যয়। আমাদের প্রিয় কবি নজরুল সাহিত্যের বাতিঘর কুমারখালী এসে কুমারখালীবাসীকে চরমভাবে কৃতার্থ করেছেন। তাঁর স্মৃতি বিজরিত স্থানটি সংরক্ষণ করা কুমারখালীবাসীর কর্তব্য বলেই মনে হয়।
নজরুল মাত্র তেতাল্লিশ বৎসর বয়সে অর্থাৎ তাঁর ভরা যৌবনেই হয়েছিলেন নির্বাক(১জুলাই ১৯৪২)। তাঁর যৌবনেরর স্মৃতিটুকুই আমাদের মনে জাগরুক। তাঁর সুন্দর তারুন্যের দ্রুতিই আমোদের পথ দেখায়। তাঁর লেখা গানগুলো পঠিত হবে, গীত হবে নানা পর্যায়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর স্বপ্নগুলো আমরা বুঝতে শিখবো। দুখি মানুষের বন্ধু অসাম্প্রদায়ীক দুখু মিয়ার মনের ঔদার্য আমাদের মাঝে ছড়িয়ে থাকবে : নজরুলের ১২২তম জন্মবার্ষিকীর প্রারম্ভে এই আমাদের আশা। আজ সবাই মিলে উপলব্ধি করার মুহূর্ত: নজরুল আমাদের অহংকার।