আবুল কাশেম মিঠুন একটি নাম, একটি প্রেরণা
আজিজ হাকিম
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালে, ফেসবুকে কারো শেয়ার থেকে
Sheikh Mithun নামে একটি ফেসবুক আইডির একটি পোস্ট দেখি। আইডিতে ঢুকে প্রোফাইল পিকচার দেখে পোস্টের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করছিলাম। একজন চিত্রনায়ক এইরকম ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে পোস্ট দেবেন? এ আবার কেমন কথা! আইডিতে ডুকে অনেকগুলো পোস্ট পড়লাম, আর ভাবলাম, আল্লাহ কতটুকু ভালোবাসলে এইরকম একজন মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসেন। আমি আবেগ তাড়িত হয়ে মিঠুন ভাইকে একটি ম্যাসেজ দেই (যদিও এইম্যাসেজ দেওয়া উচিৎ হয়নি)- “আল্লাহ কারো উপর অনুগ্রহ করতে চাইলে, তাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন”।
এই ম্যাসেজের ফিরতি ম্যাসেজ পাবো ভাবতেই পারিনি। তিনি ফিরতি ম্যাসেজে লেখেন-Yes, Thank you!!
আমি কিছুটা তাজ্জব বুনে যাই। তিনি কেমন নিরহংকার এই এক ঘটনাতেই বুঝতে পারি। পরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার আগ্রহের কথা শুনে, ম্যাসেজে তিনি শর্টফিল্ম নিয়ে কিছু পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ শুনে আমি একমাসে পাঁচটা শর্টফিল্ম বানাই। যা আমার সেইসময়ের সবচেয়ে বড় আউটপুট। তিনি আমার শর্টফিল্মগুলো দেখতেও চেয়েছিলেন। আমি কুরিয়ারের ঠিকানাও নিলাম।
একদিন আমার শর্টফিল্মগুলো পাঠানোর জন্য দুইটা সিডি কিনে আনি। সম্ভবত ১১মের দিকে তিনি খুলনায় যান। আমি ভেবেছিলাম খুলনা থেকে ফিরলেই সিডি দুটি পাঠাবো। অপেক্ষা করতেছিলাম। ২২মের আগে পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ খবর পাচ্ছিলাম না। আমি তখন সিরাজগঞ্জ আমার গ্রামের বাড়িতে। কিছু না বুঝেই মনে করলাম, ভাই হয়তো অসুস্থ। তাই ম্যাসেজে জানতে চাইলাম অসুস্থ কিনা। কোন ফিরতি ম্যাসেজ পেলাম না।
.
২৫ মে। আমার এলাকার কিছু ছেলে-পেলের সাথে আমাদের মাদ্রাসামাঠে ঘুরতে গিয়েছি। সবুজঘাসে বসে গল্প করছিলাম। কথাবলার মাঝখানেই আমি একটু ফেসবুকও চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজনের পোস্টে আমার দৃষ্টি পড়ল। “নায়ক মিঠুন সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন”। আমার কেমন যেন বিশ্বাসই হলো না। ফোন দিলাম আবদুস সামাদ নানা ভাইকে। তিনিও জানালেন একই কথা। খুব ব্যথিত হয়েছিলাম। প্রেরণার বাতিঘর এইভাবে চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। তার প্রেরণায় করা কাজ আমার শর্টফিল্মগুলোর মধ্যে তখনকার সময়ে নিজের সেরাকাজই ছিল।
শূণ্য থেকে শুরু করে পূর্ণতা পাওয়ার আগেই প্রিয় নায়ক চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। তার চিন্তা, তার কাজের প্রেরণা চিরদিন বুকের মাঝে দোলা দেবে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায়। আজ শেখ আবুল কাশেম মিঠুন নেই। কিন্তু শর্টফিল্ম থেকে সরাসরি ফিল্ম মেকিং এর কাজটাও আল্লাহ চাহেতো হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে মিঠুন ভাই বেঁচে থাকলে সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন। তার সাথে আমার সরাসরি সাক্ষাত না হলেও নাটক ফিল্ম নিয়ে তার অনুপ্রেরণায় আমার ব্যক্তিগত কাজে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। যে কারণে আল্লাহর রহমতে যেকোনো কাজে সাহস করতে পারি। আর অনুপ্রেরণা পাই ব্যাপক। কিছু সময় এমন হয় এমন প্রেরণার বাতিঘর কাছে পেয়েও আমরা প্রেরণা নিতে পারি না। মুল্যয়ন করতে ব্যর্থ হই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মিঠুন ভাইকে কবুল করুন। কামনা করি বিচারদিবসের দিনে তাঁর শেষজীবনের ভাল আমলগুলো যেন তাঁর অন্ধকার জীবনের পাপমোচন করে মুক্তির ফয়সালা হয়।
আমিন।
…
আজিজ হাকিম
কবি, সংগঠক ও ইসলামিক শর্টফ্লিম নির্মাতা
২৫/০৫/২০২১