আজ (৮ই মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস
শামীমা আক্তার
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর”। _ কাজী নজরুল ইসলাম আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস! নারী! নারী বলতে আমরা কি বুঝি? নারী মানে কি শুধুমাত্র মা, বোন, স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা? না, নারী মানে আরও অনেক কিছু! নারী মানে প্রেরণা, নারী মানে শক্তি, নারী মানে অদম্য যোদ্ধা। নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে! এটি ভাবতে আসলে খুবই ভাল লাগে! সমাজের সকল বাধা নিষেধের দেয়াল ভেঙে, সকল “না” কে পেছনে ফেলে নারী আজ অনেকদূর এগিয়েছে! সমাজের সর্বক্ষেত্রে এখন নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে! আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী! জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার একজন নারী! এবং মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রীও একজন নারী! এছাড়াও অনেক নারী মন্ত্রী এবং এমপি রয়েছেন! নারীরা এখন সব জায়গায় কাজ করছে। মাটি কাটা, মানে দিনমজুরের কাজ থেকে শুরু করে বিমান চালানো পর্যন্ত সব ধরনের কাজই এখন নারীরা করছে! নারীরা এখন সব জায়গায় তাদের মেধা এবং যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে! নারীরা এখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট পর্যন্ত জয় করেছে! রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, শিক্ষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জজ, ব্যারিস্টার, লেখক, গবেষক, উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, স্হপতি, গার্মেন্টস কর্মী, ব্যাংকার, বিমানচালক সব ধরনের পেশায় এখন নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে! এমনকি নারীরা খেলাধুলায়ও এখন অনেকদূর এগিয়ে গেছে! নারীরা এখন ফুটবল খেলছে! ক্রিকেট খেলছে! বাংলাদেশের মেয়েরা এখন জাতীয় মহিলা দলে ক্রিকেট খেলছে! এছাড়াও বাংলাদেশের মেয়েরা এসএ গেমসে সোনা জিতেছে! এটি দেশের জন্য খুবই গৌরবের বিষয়! মানে এখন নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে! কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো নারীর ক্ষমতায়ন হলেও নারীর প্রতি আমাদের পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির এখনোও কোনো পরিবর্তন হয়নি! সমাজে এখনও নারীর প্রাপ্য সম্মান এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি! নারীকে এখনও অনেকে হাতের পুতুল মনে করে! মানে যেমন খুশি নাচাবে! যেমন খুশি চালাবে! নারীদের নিজস্ব মতামত, পছন্দ এবং স্বাধীনতা বলে কিছু নেই ! নারীদেরকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা এখনও আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে বিদ্যমান! এখানে বলে রাখা ভাল যে, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়! স্বাধীনতা বলতে এখানে আমি স্বেচ্ছাচারিতাকে বুঝাইনি। স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝিয়েছি, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারকে। অনেকে আবার নারীকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী মনে করে! এ কারণে ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে! অনেক স্বামী আছেন, যারা তাদের স্ত্রীকে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করেন! আর তাই তাদের সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেন! স্ত্রীকে মারেন, বকেন, তালাক দিয়ে বিদায় করে দেন, অথবা গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন! বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আসলে নারীর প্রতি আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজের দৃষ্টভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া খুবই প্রয়োজন। হাতের পুতুল না ভেবে, ভোগের সামগ্রী না ভেবে এবং নিজস্ব সম্পত্তি না ভেবে নারীকে মানুষ ভাবার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই কেবলমাত্র নারীর অধিকার রক্ষা করা সম্ভব এবং নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান এবং মর্যাদা দেয়া সম্ভব। শুধু আধুনিককালেই নয়, যুগে যুগে নারী তার মেধা, যোগ্যতা, সাহস, শক্তি এবং ক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে গেছে। ইতিহাস তাই বলে। নারীরা পূর্বে কৃষিকাজও করেছে! সত্যি কথা বলতে নারীরাই প্রথম কৃষিকাজের সূচনা করে! আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও নারীদের ত্যাগ এবং অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা প্রতক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমাদের দেশে অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন! এটি ভেবে আমি খুবই গর্ববোধ করছি! তাই নারী মানে সাহসী, নারী মানে সংগ্রামী, নারী মানে বিপ্লবী, নারী মানে অদম্য যোদ্ধা, নারী মানে মায়াবতী, নারী মানে সুন্দর! নারীর প্রতি আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক, নারীর প্রতি সকল বৈষম্য দূর হোক, নারীর জন্য নিরাপদ হোক এই দেশ, এই সমাজ এবং নারী নির্যাতন বন্ধ হোক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এটাই আমাদের কামনা। পৃথিবীর সকল নারীকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা,ভালবাসা এবং নারী দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- একটি মেয়েকে জন্মের পর থেকেই শেখানো হয় যে, তুমি একটি মেয়ে! তুমি এটা করতে পারবেনা! ওটা করতে পারবেনা! এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। আসলে একটি মেয়ে শিশুকে শেখানো উচিত যে, প্রথমে সে একজন মানুষ, তারপর হচ্ছে সে একটি মেয়ে। মা-বাবা এবং অভিভাবকদের নিকট অনুরোধ থাকবে, মেয়ে শিশুকে মেয়ে হিসেবে বড় করে না তুলে আপনারা তাকে একজন মানুষ হিসেবে বড় করে তুলুন। আমার বাবা-মাও আমাকে মেয়ে হিসেবেই বড় করে তুলেছেন। তাই এতদিন আমি নিজেকে শুধুমাত্র একটি মেয়েই ভাবতাম! তবে এখন নিজেকে মানুষ ভাবতে শুরু করেছি।