জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’জ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গতকাল এ ডিগ্রি গ্রহণ করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশেষ এক সমাবর্তনের মাধ্যমে এ ডিগ্রি হস্তান্তর করা হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবর্তন বক্তব্যে তাঁর পিতাকে সম্মানিত করায় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষকের কাছে আমার আহ্বান ও অনুরোধ থাকবে, আপনারা গবেষণার দিকে বিশেষ নজর দেবেন। তাহলেই বাংলাদেশকে আরও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা যাবে এবং আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে সেই গৌরব ফিরে পাবে। এর আগে সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সমাবর্তনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ডিগ্রির স্মারক তুলে দেন। সমাবর্তন বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করে যে সম্মান প্রদান করা হলো, এ সিদ্ধান্ত যারা গ্রহণ করেছেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মুজিবকন্যা হিসেবে আমার জন্য আজ বিশেষ একটি দিন, আমাকে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আপনারা ডেকেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমারও বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি নিজেও গর্ববোধ করি। আমি চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা যেন হয় এবং গবেষণাকে যেন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অকৃত্রিম ত্যাগ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। ফিরে এসে দেশ গড়ার কাজ করেছেন। মাত্র তিন বছরে সাত মাস তিন দিন হাতে পেয়েছিলেন। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করে গিয়েছিলেন। তখন ১২৬টি দেশ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাঁর মতো নেতৃত্ব ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছিল। জাতিসংঘও আমাদের স্বীকৃতি দেয়। এ সময় তিনি বিভিন্ন আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করলেও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমি আবার যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতাম এবং মাস্টার্স ডিগ্রিটা শেষ করতে পারতাম তাহলে খুব খুশি হতাম। পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক ডিগ্রি পেয়েছি তাতে মন ভরে না। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলাম না। অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক একটি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটা তো না…। লেখাপড়া করে ডিগ্রি (মাস্টার্স) নিতে পারলে ভালো হতো। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা কৃষি গবেষণায় বেশ সাফল্যও পেয়েছি। এ জন্য আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান থেকে শুরু করে…।’ কারণ আমরা তো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, দ্বিতীয়টাও আমরা করব। এরপর তো আমাদের চাঁদে যেতে হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে আমি লালমনিরহাটে এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি করে দিয়েছি। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি যাতে করে সব ধরনের শিক্ষা ও গবেষণা করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার গত ১৫ বছর ধরে দেশকে সব দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগামীতে সেই অগ্রগতি যেন থেমে না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতির পিতা এই বাংলাদেশের জন্য যে মহান আত্মত্যাগ করে গেছেন, সেটি আমাদের ভুললে চলবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যেতে থাকলে আমাদের কেউ রুখতে পারবে না। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আজকের সমাবর্তন সাধারণ কোনো সমাবর্তন নয়। এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ খাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে। তাই আমরা আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তন বক্তার সাইটেশন পাঠ করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
ডিগ্রি প্রদানের বিষয়টি উপস্থাপন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। সমাবর্তনে মন্ত্রীবর্গ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।