মোঃ নুরুল ইসলাম( ফারুক) । নুরুল ইসলাম ফারুক নামেই সমধিক পরিচিত। জন্মেছেন মাতুতালয়ে, ৫ এপ্রিল ১৯৮৫ তারিখে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে। পৈত্রিক নিবাস
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। পিতার নাম মৃত আব্দুল ওহাব প্রামানিক, মায়ের নাম আলেয়া বেগম। তিনি তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। ছোট বেলা থেকেই ইলেট্রোনিক্স এবং আর্ট-এর প্রতি নেশা ছিল। বর্তমান তিনি একজন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট এবং কুষ্টিয়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে ডি.এইচ.এম.এস কোর্সে ভর্তি আছেন। শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে অর্থাভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইলেট্রোনিক্স এবং আর্ট-এর কাজ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। প্রথমে বাংলাদেশ বেতারের সৃজনী অনুষ্ঠানে তার বেশ কিছু কবিতা প্রচার হয়। তার কবিতা ছাপা হয় সাহিত্য মজলিস, আল মুবারক, সাহিত্য পদ্মা, কাশফুল সহ আরো অন্যান্য ছোট কাগজে। এবং সাপ্তাহিক জাতীয় পত্রিকা সহ বিভিন্ন স্কুল ম্যাগাজিনে ও কবিদের যৌথ প্রযোজনয় কিছু বই-এ তার কবিতা ছাপা হয়। কবি ধ্রুবতারা এবং গ্রামবাংলা সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যকার।
ই-মেইল: হঘঁৎঁষওংষধসভধৎঁ@মসবরষ.পড়স
বড় রুই
মোঃ নুরুল ইসলাম
সিস্টারদের চাই বখশিশ
দিয়েছি সাধ্য মত,
তাহাতে তাদের ভরে নাই মন
আমরা দিয়েছি যত।
বিনয়ের সাথে বলেছি ধনীর
বেশিও ভাগেতে ক্ষীণ,
দরিদ্র আমি যা দিয়েছি তাই
মন খুশি করে নিন।
মুখ দেখে বলে দিল সিস্টার
আমরা গরীব নয় !
উনাদের বুঝ জয় হোক, যেন
বুঝেছে যা তাই হয় ।
অভাবের স্মৃতি মনে করে ভাই
দুঃখ কেবলি বাড়ে!
মধ্য বৃত্ত চাইতে পারে না
ভিখারি চাইতে পারে।
আপনার ব্যথা বুঝে হাসি একা
কি বোঝাবো আর কার !
সেই সব ব্যথা কবিতায় তাই
দিলাম অলংকার।
আটতিরিশটি সাল পার হলো
কিনি নাই বড় রুই,
খাইনি’ক তাই রুই মুড়ো আজো ।
হয়েছে বছর দুই;
ছোট বোন হানি নিতি দেয় বাণী,
“আমি টাকা দুই চার
সঞ্চয় করে ঠিকি একদিন
রুই কিনে দেব মা’র;
গুছিয়ে ফেলেছি ষোল টাকা তার
আর কতদিন লাগে”
আমি হেসে বলি, “আহা বেশ বেশ
গুছিয়ে তো নাও আগে !”
মা’র এ স্বপ্ন সে পঞ্চান্ন
বড় রুই খেতে সাধ !
হানির কথায় আফসোস হয়
চোখে মানে না তো বাঁধ !
বড় রুই বেশ দামী তাই আজো
হয় নাই রুই কেনা !
তবে, রুই কিনে কি হবে বাড়িতে
হয় সেই আলোচনা।
সে বড় করুণ ! অথচ দারুণ !
হানি, বউ আর আমি
ইনিয়ে বিনিয়ে হাসাহাসি করি
সেও, রুই থেকে দামী !
সে সব নাহয় নাই বলি ভাই,
ঠিক আছে, তবে শোন–
হানি বলে, “মাছ বড় বড় করে
ভাবি বসে কাটে যেন।
বড় মাছে মা’র কাণ্ড কি হবে
কেউ করো দেখি আঁচ;
বলবে সে জানি, ‘আমি খেতে পারি?
এত বড় পিচ মাছ’ !”
আমি বলি, “দেবো করা নির্দেশ
দেখো কোন কথা নয়!
চোখ বুজে খাও কে জানে এ যোগ
জীবনে আর কি হয়।”
হানি বলে, “ভাই আমি মুড়ো খাবো
আপনি খাবেন ল্যাজা
ভাবিকে কি দেব? চোপড়ার মাছ
কিম্বা কুন্টা ভাজা।”
বউ বলে, “যা যা আমি তবে খাবো
গাদার একটি মাছ,
নাবার সঙ্গে ভাগ করে খাবো।”
শুনে- মা বলেন,” ব্যস।”
এই সব দেখে মা হাসে প্রচুর
আর চোখে খুশি জমে,
সবার আড়ালে দু’ফোটা অশ্রু
মা ফেলে হঠাৎ ভ্রমে!
মাছ কেনা নিয়ে এত কথা আহা
কে জানে হবে কি কেনা?
এর মাঝে মেয়ে জন্ম হয়েছে
তাতে হতে হলো দেনা !
কে জানে যে কবে, “বড় রুই খাবো”
এই কথা বলে মেয়ে।
সেদিন হয়তো রুই কিনে দেব
মেয়ের মুখেতে চেয়ে।
আমার কেনা রুই না খেয়েই
বাবা চলে গেল সবে !
যেদিন কিনবো এতো বড় রুই
মা কি সেই দিন রবে !
এই সব ভেবে নির্জনে বসে
আফসোস জাগে মনে
তাই তো মরমে লক্ষ্য করেছি
রুইমাছ নেব ঋণে!
কিনি তো পোশাক খাদ্য শস্য
কিনি কত আসবাব,
কিনতেই হয় সে যে প্রয়োজনী
হোক লোকসান লাভ।
বাইরের থেকে লোকে ভাবে তাই
সিস্টারদেরি মত!
যে যাই ভাবুক আসলে তো হায়
আমরা যে নয় তত!
আমি অক্ষম এ অপরাধের
ক্ষমা চাই বারবার!
এত অক্ষম সন্তান যেন
হয় না রে কোন মার।
কেউ ভাবেনা
মোঃ নুরুল ইসলাম
চরিত্রটা যাচ্ছে ক্ষয়ে
কেউ ভাবেনা তার,
ভাবছি বসে কে দেবে বাঁধ
সাধ্য আছে কার ?
ভাবছে সবাই করবে জবাই
গড়বে কসাই নাম
মন্দ ভালো যেমনে বল
নাম হলো তো নাম !
ধর্ম গেলো এবং সাথে
সাংষ্কৃতি সব,
তবু দেখি লজ্জাহীনার
চলছে কলরব।
চরিত্র নাই নাই ক্ষতি তায়
থাকলে নামের ত্রাস,
সেই খুশিতে মাস ও বছর
করবে বসবাস।
বুকের ভিতর ঝড়
মোঃ নুরুল ইসলাম
বুকের ভিতর ঝড়
কোন কথাটা বললে পরে ক’জন হবে পর!
ক’জন আমায় করবে গালি
ক’জন দিবে হাতে তালি
কার বা হব চোখের বালি
কার বা চোখের কাজল কালি
কার গলাতে কাঁটা হব
কার বা গলার হাড়
এসব ভেবে ভরা গাঙে জাগলো খাঁ খাঁ চর।
বুকের ভিতর ঝড়।
কথা দাও
মোঃ নুরুল ইসলাম
যেন পায়েল ছন্দ ভরে
আমার রূদ্ধ প্রাণে,
মিষ্টি সকাল বৃষ্টি পরে
আমায় আমন্ত্রণে।
তুমিই কি রে বৃষ্টি হয়ে
পরলে ঘরের চালে?
কাজের ভীরে ছন্দ হয়ে
পরলে তালে তালে।
সৃষ্টি কর বৃষ্টি আজি
নতুন কবিতার,
কন্ঠ ধর বল রাজি
দূর যাবেনা আর।
সেসব আগুন কেউ দেখে না
মোঃ নুরুল ইসলাম
যেসব আগুন দেখছে না কেউ
সেই আগুনে পুড়ছি আমি
যুগে যুগে পুড়ছে মানুষ পুড়ছো তুমি
সেসব আগুন দেখছে না কেউ
সেই আগুনের আঁচ লেগে হায়
মরছে মানুষ-জাত জ্ঞাতি ভাই
বিশেষ করে মুসলমানের পুড়ছে কপাল
মুসলমানের চিহ্ন মুছার আসছে রে কাল
সেসব আগুন কেউ দেখে না
সেসব আগুন কেউ দেখে না
সবাই দেখে আগুন আগুন গুলিস্তানে
গুলশানে আর বনানীতে
আরো আরো অন্য খানে
এই আগুনে জীবন পোড়ে
দালান পোড়ে মাটি পোড়ে বৃক্ষ পোড়ে
এই আগুনে রকমারি
অনেক দামী জিনিস পোড়ে
যেসব আগুন কেউ দেখে না
সেই আগুনে আত্মা পোড়ে
আত্মা পুড়ে ছাই হয়ে যায়
ভবন জুড়ে ভুবন জুড়ে
সমাজ পোড়ে শান্তি পোড়ে
সভ্যতা আর গর্ব পোড়ে
মুসলমানে সেই ইতিহাস যাচ্ছে পুড়ে
পুড়ছে হাসি পুড়ছে বাঁশি ধীরে ধীরে
নদীর পানি কলের পানি
অশ্রু ঝুরে সবাই ছোড়ে
সবই মিলে সেই দালানে
যেই দালানে আগুন ধরে
যেই আগুনে আত্মা জ্বলে
আত্মা জ্বলে আত্মা জ্বলে
হাতের কাছে হাতের কাছে
সেই আগুনের ঠান্ডা করার পানি আছে
নাচছে সে জল ছল-ছলে
আত্মা জ্বলে আত্মা জ্বলে
কেউ ডুবে না সেই পানিতে
আত্মা পোড়ার আগুন নেভে যেই পানিতে
সেই পানিতে সেই পানিতে
কেউ ডুবে না সেই পানিতে
তারা অহংকারী
মোঃ নুরুল ইসলাম
যারা ভুল করে ভুল বোঝেনাই
জ্ঞানহীন বলি তার,
সাবালক হতে একশ বছর
তার লাগে দরকার।
আর আমি জানি এক শ্রেণী প্রাণী
মানবতা নাশকারী,
ভুল বুঝে তারা চাই নাই ক্ষমা
তারাই অহংকারি!
না চাইতে যারা হেসে ক্ষমা করে
তারাতো মহৎজন,
তাদের রয়েছে আকাশ সমান
কুসুমের মত মন।
মহৎজন আর অহংকারি
এক নয় এক নয়,
এক জন ওই অষ্টমাকাশে
আর জন বালুকায়।
হয় তো এরও অধীক তফাৎ
হতে পারে মর্যাদা,
পাইনা শরম নির্ভয়ে বলি
বলতে নাই’ক বাঁধা।