আবহাওয়ার পরিবর্তনজণিত এই সময়ে মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রকার জ¦র লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যারা মূলতই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি পছন্দ করেন কিন্তু সহজেই বুঝতে পারছেন না সংগ্রহে কোন কোন মেডিসিনটি রেখে দেওয়া প্রয়োজন। তাদের জন্য আমার এই পরামর্শটি হয়ত কাজে লাগবে । আশা করি একটু মনোযোগ দিলেই আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হবেনা।
০১. হঠাৎ জ্বর দেখা দিয়েছে। শরীরে আদৌ কোন প্রকার ঘাম নেই। কিন্তু ভেতরে পুড়ে ছাড়খাড় হচ্ছে। ছটফটানি শুরু হয়েছে ফলে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে হচ্ছে, পিপাসাও প্রবল, সাথে রয়েছে মুত্যু ভয়। হৃদপিন্ডের এবং বুকের যন্ত্রণাও ঢের। এবং জ্বরের প্রকোপ বাড়তে থাকার সময় কাশিও বৃদ্ধি পেতে পারে। কাশি দেবার সময় মাথা ও বুকের যন্ত্রণাও বেড়ে যায়। এমন কিছু ভয়ংকর লক্ষণে আপনাকে স্মরণ করতে হবে একোনাইট ন্যাপ। তবে মনে রাখা প্রয়োজন শরীরের ঘাম দেখা দিলে আর একোনাইট প্রয়োগের দরকার হয়না।
০২. জ্বর এতো বেশি যে, রোগীর গা অত্যন্ত গরম থাকে। এতো গরম যে, রোগীর শরীরে হাত ছোঁয়ালে মনে হবে যে, হাত পুড়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ঘাম হয়। কখনো কখনো ঘাম এমন হয় যে, মনে হয় জ¦র এখনি ছেড়ে গেলো কিন্তু তখনি আবার তেমন জ¦র ও গা গরম। শুকনো ঘাম যাকে বলে এমন একটি লক্ষণও দেখা দিতে পারে। মনে রাখা দরকার যে অঙ্গটা চাপা দেওয়া থাকে কেবল মাত্র সেই অঙ্গেই ঘাম হয়। মাথা ব্যথাও হয় খুব। রোগী অনেক সময় ভুলভাল কথা বলতে থাকে। কোন জন্তু বা ভূত প্রেতের ছাঁয়া সে দেখতে পায় এবং ভয় পায়। ঘুম আসে কিন্তু ঘুমোয় না। রোগী থেকে থেকে চমকে ওঠে। মনে রাখা দরকার জ্বর কখনো কখনো ৪/৫ ডিগ্রিও হয়ে যেতে পারে এমন লক্ষণ সমূহে আপনাকে স্মরণ করতে হবে বেলেডোনা নামক মেডিসিনটির কথা।
০৩. রোগী একেবারে নিথর হয়ে পড়ে থাকে। কারণ নড়নে চড়নে তার সমস্ত উপসর্গের বৃদ্ধি হয়। বুক কেমন কেমন করে। চোখের রগ ও মাথা ব্যাথা করতে থাকে। সেই ব্যথা মূলত নড়নে চড়নেই বৃদ্ধি এমনকি চোখ খুললেও বেড়ে যায়। ফলে রোগী চোখ বুঁজে থাকে। সমস্ত শরীর যেনো ব্যথা হয়ে থাকে । কিছুটা উপশম হয় হাত পা পিপে দিলে। রোগী উঠে বসতে চায়না । কারণ উঠে বসতে গেলে গা –বমিস বমি লাগে আর মাথা ঘোরে। মুখের স্বাদও তার বিষাদ হয়ে যায়। তিতা হয়ে যায়। জিহবায় হলুদ বা সাদা বর্ণের প্রলেপ পড়ে। জিহবা শুষ্ক থাকে। পানি পিপাসা প্রবল থাকে। কিন্তু উঠে পানি পান করার মত ইচ্ছাও তার হয়না। একবার পানি পেলে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করে নেয়। এমন লক্ষণে প্রয়োজন হয় ব্রায়োনিয়া এল্বাম মেডিসিনটি। ব্রায়োনিয়া এল্বাম এর আরেকটি দার্শনিক লক্ষণ হচ্ছে, সে ডাক্তার বাবু অথবা অভিভাবকের নিকট বার বার বলতে থাকে যে, ‘আমার অমুক কাজ পড়ে আছে, ছাত্র হলে বলবে আমার স্কুলে যাওয়া লাগবে। তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও। ভালো ওষুধ দেও।’অর্থাৎ ব্রয়োনিয়ার রোগী তার কাজ নিয়ে খুব ভাবে।
০৪.
রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকে।একেবারে অঘোরে ঘুমোনোর মত, চুপ করে থাকে। একটু চোখ মেলে দেখেওনা, কথাতো বলেই না। এত পিপাসাও তার খুব একটা থাকে না। ¯স্নায়ুবিক দূর্বলতার কারণেও রোগী চুপ করে পড়ে থাকে। এমন লক্ষণে সোজা চলে যাবেন জেলসিমিয়াম নামক মেডিসিনটির কাছে। মনে রাখা দরকার শিশুদের এমন লক্ষণে আপনি একটুও ভয় পাবেন না। জেলসিমিয়াম প্রয়োগ করে দেখুন মন্ত্রের মতো কাজ করে।
০৫. জ্বরের সাথে ছটফটানি। অন্তর্দাহ, জ্বর– একবারেই ছাড়েনা।কখণো কখনো কখনো একটু কমে , পরে যতোই উত্তাপ বাড়ে ততোই ছটফটানি ও দূর্বলতার বৃদ্ধি হয়। ক্রমেই বিকার ভাব এসে হাজির হয়। পিপাসা থাকে। একটু একটু করে পানি পান করে। পানি পান করা মাত্রই বমি করে। সামান্য পানিটুকুও পেটে রাখতে পারেনা। জ্বালা যন্ত্রনা থাকে। সে সকল জ্বালা গরমে উপশম হয়। ভয় পায়। মৃত্যুভয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে। এমন লক্ষণে আর্সেনিক এল্বাম খুব প্রয়োজন হয়।
পাঠক, জ্বর লক্ষণে আরো অনেকগুলো মেডিসিন রয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে আপনাদের সামনে সহজবোধ্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আপনারা চোখ রাখুন বাংলাদেশ ভূমিতে সব সময়। (চলবে)
গ্রন্থনায়
ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন
ডি.এইচ.এম.এস(বিএইচবি)ঢাকা।
মোবাইল০১৭৫০৪৯৫৮২০
খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া,
হেমায়েতপুর সাভার, ঢাকা।