মাজেদুল ইসলাম, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক। করোনা নয় কিস্তির চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম সর্বসাধারণের ।কুষ্টিয়া জেলায় চলছে সর্বাত্মক লক ডাউন। যেহেতু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নিয়ে সবার মধ্যেই আতংক কাজ করছে। তবুও কিস্তির চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে সর্ব সাধারণের। গত ২১ জুন তারিখ রাত বারোটার পর থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক লকডাউন। কারণ উদ্বেগজনক হারে কুষ্টিয়া জেলাতে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা। সবদিক বিবেচনা করে সরকারী আমলা থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে লকডাউন মেনে চলছে। কিন্তু এসব কিছুর আড়ালে ঢেঁকে যাচ্ছে সর্ব সাধারণের হাহাকার। যা শুধুমাত্র ২৫০০ টাকা বা কয়েকদিনের খাবার দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়। কারণ কুষ্টিয়া জেলায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। যেখানে প্রায় ৯০% সাধারণ মানুষ কোন না কোন ভাবে জড়িত। তা স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে। তাদের আক্ষেপ নেই এই লোন করা নিয়ে। তাদের আফসোস বা অভিযোগ সরকার বা ক্ষমতাশীন মানুষজন যখন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তা যেন সর্বসাধারণের উপযোগী হয় তা মাথায় রাখা জরুরী। আক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে ভ্যান চালক আকমল বলেন, ‘কি বলবো ভাই। ডেইলি ভ্যান চালায়ে যা ইনকাম করি তাই দিয়ে ৫ জনের সুংসার চালাই, বোর জন্যি ওষদ কিনি, আরও কিস্তি দিয়া লাগে। কিন্তুক কতা হইলো লকডাউন দিলি পরে ভ্যান তো চালাতি পারিনে। তালি খাবো ক্যাম্মা করে। ওষদ কেনবো কি দে? কিস্তিই বা দেবো ক্যাম্মা করে? সরকার যুদি মনে করে লক ডাউন দিবি। তালি দিয়ে দিক। সব বন্ধ থাকতি হবি। আমি ইনকামও করতি পারবো না। কিস্তি দিতি হবি। বন্ধ হলি সব বন্দ হোক। কিছু খুলা কিছু বন্দ রাখে কাম নাই।’
ভ্যানচালক আকমলের কথায় সাঁয় দেন তার পাশে বশে থাকা রাজমিস্ত্রীর সহকারী (জুগালে) শহীদুল। বলেন, এই যে দুডে দিন ঘরের তেন বাড়াতি পারতিছি নে। আব্বার শরীল খারাপ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাতি হবি। কিন্তুক টাকা নাই। সে না হয় মরুক বাঁচুক কাম করে টাহা গুছায়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবোনে। কিন্তু রাত পুয়ালি পরে তো কিস্তিওয়ালা আসপিনি। কিস্তি না নিয়ে তো যাবিনানে। সেহুন কি করবোনে। প্রশ্নটি হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে ছলছল চোখে শুন্যে তাকান শহীদুল। আকমল-শহীদুলদের মতো অনেক মানুষ আছেন তারা স্থানীয় এনজিওর সাথে জড়িত। যাদের স্বপ্ন পূরণ হয় এই এনজিওর লোনের টাকা দিয়ে। যা পুরো বছর ধরে খেটে খুটে শোধ করেন। কিন্তু করোনা এসে তাদের খাওয়ার চিন্তার বদলে কপালে তুলে দিয়েছে কিস্তির চিন্তা। সর্বসাধারণের ভোগান্তি আর কষ্টের কথা যখন স্থানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাহাবুল ইসলামের সাথে শেয়ার করা হলো তখন তিনি বলেন, ভাই কি বলবো বলেন? আমিও মানুষ আমার বিচার বিবেক বুদ্ধি আছে। আমাকে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ দিতেই হবে। না দিলে আদায় হবে না। আদায় না দেখাতে পারলে অফিসে গিয়ে হাজারো কথা শুনতে হবে। যা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। লকডাউনে যদি সব বন্ধ থাকে তাহলে এইসব এনজিও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে আমরা আরও বেশী খুশি। কারণ করোনা ভয়াবহতার মধ্যে আমরা বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। কে কোথা থেকে এসে টাকা দিচ্ছে তা তো আমি জানিনা ভাই। আর গ্রাম্য এলাকার মানুষও তো কম সচেতন। আমি পিপিই ব্যবহার করলেও তো আমার রক্ষা নাই। তাই আমারও চাওয়া সাধারণ মানুষ হিসেবে। লকডাউন সর্বাত্মকভাবে হলে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হোক। আমরা সাধারণ মানুষ শুধু করোনা থেকে বাঁচার চিন্তা মাথায় রাখি।