কুষ্টিয়ার খোকসায় একটি বেসরকারী ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান ও কলেজ ছাত্র হিরণ (২৩) হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বিক্ষোভকারীদের দাবী খোকসার নিউ হেল্থ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনিষ্টিক সেন্টারটির অভ্যন্তরের কারো দ্বারা সুপরিকল্পিত ভাবে হিরণকে ইলেকট্রিক শকড দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।আর এই হত্যাকান্ডের সুষ্টু তদন্ত ও বিচারের প্রত্যাশায় দীর্ঘসময় ধরে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
রবিবার সকালে খোকসা সরকারী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভটি শুরু হয়ে খোকসা বাস স্ট্যান্ডে এসে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে শ্লোগান দিতে থাকে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন নিহত হিরণের বাবা আকমল হোসেন, মামা নিজাম উদ্দিন, গ্রামবাসী মতিয়ার রহমান, কলেজ ছাত্র সানভির সেলিম , বাঁধন, সুজন প্রমূখ।
সকাল ১১ টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কটি অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করায় সড়কে দুই পাশে প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। । এতে সাধারন যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। পরে খোকসা থানা পুলিশের ওসি তদন্ত মামুনুর রশিদ এক ঘন্টার মধ্যে খোকসা হেল্থ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনিষ্টিক সেন্টারটি বন্ধ করা ও দোষীদের বিরুদ্ধের অভিযোগের সঠিক তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে পাশে অবস্থান গ্রহন করে। পরে তারা আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিহত কলেজ ছাত্র হিরণ হোসেন এর বাবা আকমল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, তার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। ক্লিনিকের নানা অসামাজিক কাজের কারণে সে কয়েক দফায় চাকরি ছাড়তে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের অনৈতিক কর্ম কান্ডের গোমর ফাঁসের ভয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়তে দেয়নি। বৃদ্ধ আকমল হোসেনসহ এলাকারশত শত মানুষ হিরণ হত্যার বিচারের দাবিতে প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধ করে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেন।
হিরণের মামা নিজাম উদ্দিন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একবার বলছে, যে হিরণের হার্টএ্যাটাক হয়েছিলো , আবার বলছে, বিদ্যুতের শকড হয়েছিলো। অপরদিকে তারা গেটের সিসি ক্যামেরাটি বন্ধ করে রেখে বলছে , যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিলো।রমজানের ঈদের দিনেও ছুটি দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে তিন চার কিলোমিটার দুরে বাড়ী অথচ একবারের জন্যও বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়নি তারা। তাদের এমন সব আচরণই প্রমাণ করে যে, আসলে হিরণকে তারা হত্যা করেছে সুপরিকল্পিতভাবে।
বুধবার (১৮ মে) দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে খোকসা হেল্থ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনষ্টিক সেন্টারের ক্লপসিপল গেটের ভিতর থেকে প্যাথলজি টেকনিশিয়ান ও কলেজ ছাত্র হিরন (২৩) কে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। তবে ওই নিহত কলেজ ছাত্র ও প্যাথলজি টেকনিশিয়ানের ডান হাতে বিদ্যুতের শকডে পোড়ার দুইটি বৃহৎ ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায় ।
প্যাথলজি টেকনিশিয়ান হিরণ উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের সিংঘরিয়া গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে। সে রাজবাড়ী সরকারী মহাবিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলো এবং ওই হাসপাতালে চাকরি করতো।