কদমগাছ গুম হয়েছে ডালপালা সমেত
তাজ ইসলাম
আমার নিরবতা গুম করেছে কে?
গুম হওয়া সন্তানের মায়ের মত
একটা ভোর আর্তনাদে জেগে ওঠে,
বেড়ে যায় পাখিদের কিচিরমিচির
ঘুমাচ্ছন্ন মানুষেরা তবু জাগেনি
গভীর ঘুমে নাক ডাকছে বিবশ দেহে।
চিউ চিউ করে কাঁদতে কাঁদতে
কবুতর ছানার ঝরছে চোখ দিয়ে রক্ত
মা কবুতর নিখোঁজ তাদের
সবাই জানে তবু কেউ উচ্চারণ করে না
হুলোবিড়ালের নাম
কেউ উচ্চারণ করে না ভয়ে।
রাতা মোরগ প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েও ছিল নিরব
যে প্রত্যহ ডেকে ডেকে সংবাদ দিত একটি নতুন ভোরের
একদিন সেই রাতা মোরগও আর ফিরে আসেনি
শুধু গুমের খাতায় লিখে রাখা হল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের নাম।
গুমে অভস্ত্য এখন নগরের দেয়াল
রাজপথের জ্যামের মত গুম এখন প্রাত্যহিক বিষয়।
কাকেরা সমস্বরে চিৎকার করছে
একটা তরতাজা কাক বসাছিল এখানে
এখন নিচে পড়ে আছে কিছু কালো পালক
কাকদের অভিযোগ এই বিদ্যুতের তার
গুম করেছে কাকের প্রাণ।
কাকেরা কা কা করছে একটি কাকের প্রাণ গুমের প্রতিবাদে।
পাশেই শালিকেরা,চড়ুইয়েরা
নিজেদের আহার কুড়াতে ব্যাস্ত।
ঠিক যেমন একদল মানুষ
মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ে মজে থাকে
মজলুমের কোন আর্তচিৎকারেই
তাতে ব্যত্যয় ঘটেনি।
স্বামীর গুমবিরহে বিলাপরত
হতভাগা স্ত্রীর মত
অঝোরে কাঁদছে বর্ষার চোখ।
চোখ থেকে নেমে আসে বৃষ্টিরধারা
এখানে কদম ছিল গ্রীষ্মেরকালে
কই গেল হায়! কি করে তা নাই হয়ে গেল?
ডালপালা সমেত কে করেছে খুন? শিকড়শুদ্ধ গুম নিপূণ দক্ষতায় ক্ষমতার হাত ছাড়া আর কে তা পারে?
কদমের শোকে বর্ষার চোখে
বৃষ্টির টানা কান্নায় আকাশ শোকাচ্ছন্ন
তবুও পৃথিবী চলে নিজের গতীতে
বাতাসের সাথে খুঁনসুটি করে
অন্যসব বৃক্ষরাজি।
পাখিরা বৃষ্টিভেজা দেহে
পাতার আড়ালে বসে
নিজস্ব ভাষায় গেয়ে যায় গান
কদমগুমের শোকে কেউ থেমে থাকেনি।
দোয়েল নাড়াতে থাকে নিজের সাদাকালো লেজ।
পাখিদের কোন ফেসবুক নেই
থাকলে আনমনে স্ক্রল করতে করতে
মানুষের মত মাঝে মাঝে বেদনার বাটন চেপে দায় সারাত।
অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটি। এখানে সময় সমসাময়িক। এখানে জীবন। এখানে কদমের আড়ালে বর্ষার কান্না। চিত্রকল্প ও উপমায় দারুণ সাজুয্য। আমি মুগ্ধ আমি তৃপ্ত এমন কাব্যকলায়।