নতুন নিয়ম আসছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ পথে এগুতে চাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বেতন এমপিও করাতে ঘাটে ঘাটে দৌড় দিতে হবেনা নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে। মৌলিক এই পরিবর্তন আসছে শুধুমাত্র বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ ও এমপিওভুক্তিতে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে নতুন কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। হবে না শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। শূন্য আসনের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের শূন্য আসনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে কমিশন। এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা।
বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে ২০০৫ সালে গঠিত হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতা পায় প্রতিষ্ঠানটি। এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে রয়েছে নানা জটিলতা। সুপারিশের পর নিয়োগ পেতে আছে দীর্ঘসূত্রতা। আর নানা অনিয়মে নাভিশ্বাস নিয়োগ প্রত্যাশীদের।
তাই এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) নামে পিএসসির আদলে কমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন কমিশন প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষার্থীদের আর নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। শূন্য আসনে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করবে এনটিএসসি। যোগ্য প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপারিচালক অধ্যাপক নেহাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একজন শিক্ষক এক জায়গায় পদায়ন আছে। সে পরের এনটিআরসিতে আরেকটি জায়গায় চলে যায়। এতে আগের জায়গাটি শূন্য হয়ে যায়। সে ফাঁকা পদটি পরে পূরণ করতে একটি দীর্ঘ সময় চলে যায়। এতে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, যদি নতুন কমিশন হয় সেখানে হয়তো এমন হবে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে।
নতুন কমিশন প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আসবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার পরামর্শ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের।
তার মতে, পিএসসির মতো একটা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান দরকার। পাশাপাশি এমন নীতিমালা তৈরি করতে হবে যেখানে কাদের শিক্ষক হিসেবে চাওয়া হচ্ছে, তাদের বেতন কেমন হবে এসব বিষয় থাকবে।
ইতোমধ্যে এনটিএসসি গঠন করতে একটি খসড়া আইন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলতি মাসেই চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হচ্ছে। একজন অতিরিক্ত সচিবকে চেয়ারম্যান ও পাঁচজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য করে এনটিএসসি গঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের আইনের খসড়া দ্রুত পাঠাতে এনটিআরসিএকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আইনটি পাওয়ার পর তা আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সচিব কমিটিতে পাঠাতে হবে। এরপর মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে তা জাতীয় সংসদে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। এনটিএসসির জন্য জনবল নিয়োগে পদ সৃজন ও নিয়োগসংক্রান্ত দিক থাকায় এসব প্রক্রিয়া লাগবে।