হাসপাতালের বেডে একজন রুগি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে, তার স্বজনেরা পাগলপ্রায় কি করবে বুঝতে পারছে না। অন্য একজন দাড়িয়ে আছে বেড ধরে, কারন মৃত্যুমুখি যাত্রির আজরাইল নিয়ে গেলেই, সে তার মাকে ওই বেডে দিতে পারবে। এক সময় নিথর হয়ে যায় দেহটি। ছেলেটি পাশে দাড়িয়ে আছে, মৃত্যুর মিছিল তার কাছে কিছুই মনে হচ্ছেনা। নিথর দেহটির পরিজন লাশটি নিয়ে যায়, এতে সাহায্য করে দাড়িয়ে থাকা অসহায় ছেলেটা, কারন তার মাকে এই বেড দিতে পারবে। তারাতারি সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র বেডের উপর রেখে বেডটি দখল করে। সার্থপর ছেলেটি এটা ভাবেনা কিছুক্ষণ আগে এই বেডে একজন মারা গেছে।পাথর হয়ে যায় তার শরীরসহ মন। কিভাবে বাঁচাবে তার মাকে একটি চেষ্টাই মাথায়।মাকে বেডে দেওয়া হয়। অক্সিজেন চলছে, মায়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।বাহিরে ঈদের নামাজের বয়ান ভেসে আসছে কানে,তখন সে বুঝতে পারে আজ ঈদ।পুরো শহর জুড়ে আনন্দের খেলা, শুধু ছেলেটির মুখ মলিন। মা কাশি দিচ্ছে, হাত পেতে আছে কাশি ফেলানোর জন্য, মাকে যেন উঠতে না হয়। এটা নাকি ছোয়াচে রোগ, কই ছেলেটিরতো তা মনে হচ্ছেনা। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে শব্দহীন ভাবে, মা যেন বুঝতে না পারে। নিদ্রাহীন আজ ৯ দিন, রাত দিন মায়ের পাশে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কি করলে মা একটু শান্তি পাবে, একটু সুস্থ হবে। মাকে আশার বানী শোনাচ্ছে বার বার, ওদিকে নিরাশার বানে ভেসে যাচ্ছে নিজে। নিজেকে বড় অসহায় লাগছে। কোন শক্তিনেই তার। নামাজ পড়ে আল্লাহ কাছে বলছে…হে আল্লাহ আমার হায়াত থেকে তুমি তাকে দান করো তাকে কিছু হায়ত। একসময় মায়ের শ্বাসকষ্ট বেরে যায়, একফোটা নিশ্বাস নিতে যেন মায়ের বুকটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে দিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, আবার ঔষুধের দোকানে, কোন ঔষধে মা ভালো হবে তা জানে না। আস্তে আস্তে মায়ের নিশ্বাস আরো ভারি হয়ে আসে। অক্সিজেনের হাইফ্লো চলছে। মসজিদে ফজরের আজান চলছে। আজ মেঘমালা প্রচন্ড ছোটাছুটি করছে, মেঘমালা কান্না করবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ কিছু একটা হতে চলছে। মায়ের শরীর আস্তে আস্তে নিথর হয়ে যাচ্ছে, কতদিন ঘুমায়না, আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হবে। স্বর্থপরের মত ছেলেটিকে একা ফেলে চিরনিদ্রায় হারিয়ে গেলো। মাথার উপর যেন সমস্ত পৃথিবীটা ভেঙে পরলে, কাঁদতে পারছে না। ছেলেটি কাঁদতে ভুলে গেছে, শুধু বুকের ভেতরটায় পাথরের আঘাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মায়ের নিথর দেহটি এ্যম্বুলেন্সে উঠাচ্ছে। অন্যদিকে আরেকজন বেডটি দখল নিয়েছে। আরো একটি জীবনের যুদ্ধ শুরু হলো।।